বিনামূল্যে করোনার চিকিৎসা দিতে চালু হল টেলি-হেলথ নেটওয়ার্ক — স্বাস্থ্য

বিনামূল্যে করোনার চিকিৎসা দিতে চালু হল টেলি-হেলথ নেটওয়ার্ক — স্বাস্থ্য

১৩০ কোটি মানুষকে সমান সুযোগ দিতে ডিজিটাল হেলথকেয়ার প্রণোদনা

বেঙ্গালুরু / কলকাতা: করোনার চিকিৎসার জন্য দেশের ১০০ জনের বেশি স্বাস্থ্য পরিষেবা বিশেষজ্ঞ একসঙ্গে মিলে চালু করেছেন দেশজোড়া টেলিমিডিয়া মঞ্চ — স্বাস্থ্য। এই ব্যবস্থা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারতীয়দের যুক্ত করবে সেরা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য পরিেষবাদাতাদের সঙ্গে। সাম্প্রতিক সঙ্কটের সময়ে টেলিমেডিসিনকে জাতীয় গুরুত্বের জায়গায় তুলে আনতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই আর্জিতে দ্রুত সাড়া দিয়ে দেশের স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তিক্ষেত্রের শীর্ষস্থানীয়রা এনেছেন ডিজিটাল প্রযুক্তি মঞ্চ স্বাস্থ্যকে। মোবাইল অ্যাপভিত্তিক এই পরিষেবা ভারতের প্রযুক্তিভিত্তিক ক্ষমতার প্রকাশ। এই মঞ্চ দেশের ১৩০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে সাধ্যের মধ্যে চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার সমান সুযোগ। দেশের যে কোনও অঞ্চলের বাসিন্দারা এবং যে কোনও আয়গোষ্ঠীর লোকেরা এই পরিষেবার সুযোগ  নিতে পারবেন।

দেশীয় এই ডিজিটাল হেলথকেয়ার ব্যবস্থা এমন একটা সময়ে চালু করা হচ্ছে যখন কোভিড ১৯ অতিমারী পুরনো পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে একটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।

স্বাস্থ্য গভর্নিং কাউন্সিলের ক্রিস গোপালাকৃষ্ণান বলেন, ‘এই সঙ্কটের সময় রোগীদের দ্রুত স্বস্তি দিতে এবং বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে গোটা দেশের চিকিৎসা জগতের সেরা মানবসম্পদকে জড়ো করেছে স্বাস্থ্য। জনস্বাস্থ্যে আরও বেশি সাফল্য অর্জনে কাজ করবে এই মঞ্চ। মেডিক্যাল কাউন্সিল, জনস্বাস্থ্য সংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করবে যাতে সাধারণ মানুষ গুণমান সম্পন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা সহজে পেতে পারেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বর্তমান সঙ্কট ভারতে স্বাস্থ্য পরিষেবা সরবরাহ ব্যবস্থাকে নতুন করে গড়ে তোলার একটা নতুন সুযোগ এনে দেবে এই মঞ্চ।’

নানা ধরনের ভিডিও ও টেলিফোন ব্যবস্থার মাধ্যমে রোগীরা যাতে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে স্বচ্ছন্দে এবং প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও পরিষেবা পেতে পারেন, তার ব্যবস্থা করবে স্বাস্থ্য। কোন্‌ ধরনের চিকিৎসা দরকার তা ঠিক করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা কাজে লাগানো হবে। এতে পাওয়া যাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সই করা প্রেসক্রিপশন। চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শও পাওয়া যাবে জিডিটাল পদ্ধতিতে।

বিনামূল্যে পরামর্শ ছাড়া স্বাস্থ্য দেবে হোম কোয়ারেন্টিনে সহযোগিতা, ডায়াগনিস্টিক ও ফার্মেসি সংক্রান্ত সহযোগিতা, হাসপাতালের বেড খুঁজে দেওয়া এবং ভরতুকির দামে তা বুকিং করার জন্য সহযোগিতা।

স্বাস্থ্যমঞ্চের সব চিকিৎসকের প্রয়োজনীয় তথ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। টেলিফোনে পরামর্শ দেওয়ার জন্য তাঁদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং কোভিড ১৯এর চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রোটোকলও তাঁদের শেখানো হয়েছে। হেলথকেয়ার মঞ্চ চালানোর জন্য এই শিল্পের ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তার যে সব নিয়মকানুন রয়েছে তা পুরোপুরি মেনে চলবে এই মঞ্চ। রোগী ও অন্যান্যদের তথ্য যাতে নিরাপদে পাঠানো হয়, যেগুলি জমা করে রাখা, তার ওপর নজরদারি করা ও দরকারে সেই তথ্য যাতে পাওয়া যায়— এসব কিছু নিশ্চিত করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য। এখন এই অ্যাপে পরামর্শ করা যাবে হিন্দি, বাংলা ও গুজরাটি ভাষায়। পরে পরিষেবা পাওয়া যাবে ২৫টি ভারতীয় ভাষায়।

নাগরিকদের ক্ষমতায়নের মঞ্চ হিসাবে জিডিটাল হেলথকেয়ারকে গণহারে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে স্বাস্থ্যই  ভারতের প্রথম বড় উদ্যোগ।

গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য ডক্টর নাচিকেত মোর বলেন, ‘ভারতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন শাখা থেকে আসা সদস্যরা হাত মিলিেয়ছেন এই অনন্য অলাভজনক সংস্থা স্বাস্থ্য-এ। এখানে রয়েছেন চিকিৎসক, ছোট ও বড় হাসপাতাল, ডায়াগনিস্টিক ল্যাবরেটরি, ফার্মেসি, টেলি মেডিসিন প্ল্যাটফর্ম, বিমা কোম্পানি ও হেলথকেয়ার প্রযুক্তি কোম্পানি। দেশের প্রতিটি কোনায় প্রতিটি ভারতবাসীর জন্য সাধ্যমতো চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়ার লক্ষ্যেই এঁরা হাত মিলিয়েছেন। এই সঙ্কটের সময় যাদের দরকার তাঁদের সকলের কাছে চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়া এবং তাঁদের স্বাস্থ্যের সবরকম প্রয়োজন মেটানোই এই উদ্যোগের লক্ষ্য। মঞ্চের সদস্যদের কাছ থেকে সব  রোগী যাতে সহজে পরিষেবা পেতে পারেন,  সেই ব্যবস্থাই করবে স্বাস্থ্য। মঞ্চের প্রতিটি সদস্যও সবরকম রোগে যাতে উচ্চমানের পরিষেবা দিতে পারেন তারও ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য চিকিৎসকদের দেওয়া হবে সবচেয়ে সেরা প্রোটোকল, প্রযুক্তি ও মঞ্চ যেখানে সব ধরনের তথ্য পুরোপুরি আদানপ্রদান করা যাবে। এই মঞ্চ সর্বাধুনিক নির্দেশিকা মেনে চলবে। ’

এই প্রজেক্ট টিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ডক্টর এন কে জয়রাম বলেন, ‘এখন আমরা করোনা মহামারীর মুখোমুখি। এই রোগ দূর করার একটা প্রধান উপায় হল সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে চলেছে টেলিমেডিসিন। ২০০০ সালের গোড়া থেকে চিকিৎসকেরা টলিফোনে পরামর্শ দেওয়া শুরু করেছেন। তবে এখনকার পরিস্থিতির জন্য এই পদ্ধতি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টেলিমেডিসিনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে স্বাস্থ্য এবং এতে রোগীরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং নিজেরা নিজেদের যত্ন নিতে শিখবেন।’

হেলথকেয়ার প্রদানকারী সংস্থা, উদ্যোগপতি, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসকদের একটা অলাভজনক কনসর্টিয়াম হল স্বাস্থ্য। যেসব স্টার্ট আপ সংস্থা অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়ছে সেই সব উদ্যোগপতি ও বিনিয়োগপতিদের সাহায্য করার একটা প্রতিষ্ঠান হল এসিটি গ্র্যান্টস। তাদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য পেয়েছে ১০ কোটি টাকার (১.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সহায়তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *